মানুষের এক অদ্ভুত আবেগ রয়েছে যার নাম আশা, সে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আগামীকালের অপেক্ষায়। মানুষ তার ভবিষ্যতের জন্য আশা করে, স্বপ্ন দেখে বলেই নিজের মাঝে সাহস আর শক্তি খুঁজে পায় বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু আবার এই আশার উল্টো পিঠে বাস করে হতাশা যে মুহূর্তের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে অতল অন্ধকারে। হতাশ হওয়া বা নিরাশায় আক্রান্ত হওয়ার পিছনে রয়েছে হাজার কারণ। ভালোবাসা হারানো, কর্মজীবনে ব্যর্থতা, পরিবারে অশান্তি, নিজেকে নিয়ে অতৃপ্ত, প্রিয়জনের মৃত্যু, আর্থিক দুরবস্থা, বেকারত্ব ইত্যাদি মানুষের মধ্যে হতাশার আগমন জানায়। প্রতিটি মানুষের কাছেই তার নিজের কারণটি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা একমাত্র তিনিই জানেন যে কি ভীষণ কষ্টের মাঝে তাঁকে চলতে হচ্ছে পথ। মানুষ আশা করে বলেই স্বপ্ন দেখে, আর স্বপ্ন দেখে বলেই সেটাকে সত্য করার জন্য এগিয়ে যায়। এর এগিয়ে যেতে যেতেই একদিন স্পর্শ করে ফেলে নিজের লক্ষ্য। কিন্তু যদি শুরুতেই মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে, তাহলে কি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকে স্পর্শ করবে? কেননা হতাশা সেই বস্তু যা মানুষের জীবনীশক্তি নিংড়ে বের করে নেয়। হতাশা আপনার জীবনে আগ্রাসী আক্রমণ চালাতে পারে। তবে যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে ই পারবে হতাশাকে জয় করে সাফল্যের উচ্চ শিখর ছুঁতে। আর এজন্য কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন...

১)নিজের মূল্য বুঝতে চেষ্টা করুন :- নিজের চারপাশে তাকান, একটি পরিবার আছে আপনার। যাদের পরিবার নেই তাঁদের নিশ্চয়ই আছে বন্ধুবান্ধব বা একান্ত আপন জন। আপনার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, জীবনে কোথাও না কোথাও কয়েকজন মানুষ এমন নিশ্চয়ই আছেন যারা আপনাকে ভালোবাসেন। তাঁরা ভালবাসেন আপনাকে, কারণ তাঁদের কাছে আপনি মূল্যবান। জীবনে যত খারাপ ঘটনাই ঘটুক না কেন, এই মানুষ গুলো সবসময় আপনাকে ভালোবাসবে। তাঁদের ভালোবাসা পাবার জন্য আপনাকে আহামরি কিছু হতে হবে না কখনোই। একবার ভাবুন তো, এটা কি জীবনের বিশাল এক অর্জন নয়?
২)নতুন সূচনার সাহস খুঁজুন :- জীবনে যতই অন্ধকার আসুক, যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেন নতুন করে সূচনা করতেই হবে। কেননা নতুন সূচনা না করলে আপনার জীবনের বর্তমান দুরবস্থা কাটবে না কিছুতেই। মনের মাঝে যতই হতাশার অন্ধকার জমে থাকুক নে কেন, নিজের অতীতের সফলতাগুলো থেকে খুঁজে নিন নতুন করে শুরু করবার সূচনা। আর একবার যখন নতুন সূচনা হয়ে যাবে, দেখবেন মনের হতাশাও আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করেছে।
৩)নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলুন :- হতাশাগ্রস্ত মানুষ খুব সহজেই নেশার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পরেন। সিগারেট, মদ ছাড়াও আরও নানান রকম নেশা জাতীয় দ্রব্য তাঁদেরকে আকর্ষণ করতে পারে, কেননা নেশার জগতে তাঁরা হতাশা ভুলে যেতে পারেন বলে মনে হয়। এই ভুলে যাওয়া কিন্তু সাময়িক। হতাশার অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে যে নেশার দিকে ঝুঁকছেন আপনি, সেই নেশাই আপনাকে আরও ঠেলে দিবে আজীবনের হতাশায়।
৪)সময়কে সুযোগ দিন ক্ষত পূরণের :- কেন হতাশ হয়ে পরেছেন আপনি? ছেড়ে চলে গিয়েছে আপন মানুষটি? চাকরি চলে গেছে? জীবনের কোনও দিকে সফলতা খুঁজে পাচ্ছেন না? হয়তো থাকতে পারে আরও অনেক কারণ। কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন, নিজের মনকে একটু সময় দিন ক্ষত পূরণের জন্য। সময় সকল কষ্টকে ফিকে করে রাখার ক্ষমতা রাখে। নিজেকে একটু সময় দিন, আজ যে কারণটা ভীষণ বড় মনে হচ্ছেৃ কিছুদিন পর সেটা নাও হতে পারে।
৫)ক্ষমা করতে শিখুন :-আমরা হতাশ কখন হই? যখন কোনও একটা কারণে আমাদের মনের আশা পূরণ হয় না, জীবন আমাদের পরিকল্পনা মাফিক চলে না। আর যদি তার পেছনে কোনও মানুষের হাত থেকে থাকে, চেষ্টা করুন তাঁকে ক্ষমা করার। কেননা যতদিন তাদের ক্ষমা করতে পারবেন না, ততদিন পর্যন্ত আপনার মন মুক্ত হবে না অতীতের অন্ধকার থেকে। আর তা না হলে মুক্তি মিলবে না হতাশা থেকেও।
৬)ত্যাগ করুন সব বদ অভ্যাস: -আহামরি কিছু নয়, নিজের জীবনে বা আশে পাশের পৃথিবীতে আনুন ছোট্ট কিছু পরিবর্তন। কতই না বদ অভ্যাস থাকে আমাদের। অহেতুক রাগারাগি করা, অন্যের গীবত করা, মিথ্যা বলা ইত্যাদি কত শত বদ অভ্যাসই না আছে আমাদের। নিজের বদ অভ্যাস গুলোকে ত্যাগ করার চেষ্টা করুন, নিজের পরিবার বা আশেপাশে কোনও কিছু পরিবর্তন যোগ্য হলে সেটা করার চেষ্টা করুন। যখন সফল হবেন, দেখবেন নিজের জীবনে হতাশার অন্ধকার কমতে শুরু করেছে।
৭)অন্যকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুন:- ভালো কাজ বা সৎ কাজ মানুষের মনে অন্য রকম একটা সাহসের সঞ্চার করে, আর সাহসী মানুষ কখনো হতাশায় ডুবে যান না। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটি ভালো কাজ করতে। কারো উপকার করুন বিনা স্বার্থে, কারো দিকে বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত। যোগ দিতে পারেন কোনও চ্যারিটি কর্মকাণ্ডেও। অন্য কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা আছে আপনার, এই বোধটি দেখবেন কি ভীষণ শক্তি যোগাবে আপনার মাঝে।
৮)বিশ্বাস রাখুন মানবিক সম্পর্কে :- নিজের মানবিক সম্পর্ক গুলোর ওপরে নির্ভর করতে শিখুন। পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আপন জনদের সাথে যে আবেগ ও সামাজিকতার বন্ধনে আপনি আবদ্ধ, সেটাকে কখনো খাটো করে দেখবেন না। এমনকি যদি কোনও সম্পর্কের কারণেই আপনার বর্তমান এই হতাশা এসে থাকে, তবুও বিশ্বাস হারাবেন না অন্য সম্পর্ক গুলোর প্রতি। একটি সম্পর্ক আপনাকে কষ্ট দিয়েছে বলে সকল সম্পর্ক দিবে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই।
৯)নিজেকে যথেষ্ট ভাবতে শিখুন :- কোনও কারণে বা কারো কারণে নিজেকে ছোট ভাববেন না। পৃথিবীতে সকল মানুষের কাছে সব কিছু থাকবে না, আর এটাই স্বাভাবিক। সকলের চোখ ধাঁধানো রূপ থাকবে না, বিশাল অর্থ বিত্ত বা সুনাম থাকবে না। প্রতিটি মানুষের নিজের একটি অবস্থান আছে জগতের বুকে, আর এই অবস্থানে প্রতি মানুষই বিশেষ। নিজেকে কখনো অন্য কারো সাথে তুলনা করতে যাবেন না। বরং যেমন আছেন আপনি, নিজেকে তেমনই যথেষ্ট ভেবে নিন।
১০) বিশ্বাস রাখুন নিজের ওপর :- লক্ষ্য করে দেখবেন, বিপদ দেখতে যত বড় বড় আসলে ততটা হয়না। বেশির ভাগ সময়েই আমাদের অতি আশংকা বিপদকে বিশাল বানিয়ে ফেলে। হতাশার ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই। যত আপনি নিজেকে আর নিজের জীবনকে খারাপ আর কুৎসিত মনে করবেন, ততই বাড়তে থাকবে আপনার হতাশা। নিজেকে বা জীবনকে গালমন্দ করে বা আস্থা হারিয়ে আপনি কিছুই পাবেন না। বরং চেষ্টা করুন বিশ্বাসটা ধরে রাখতে। জীবন সকল দুঃসময় কখনো না কখনো কাটিয়ে ওঠে। আপনার ক্ষেত্রেও তা ঘটবে এই বিশ্বাস ধারণ করুন।